২০২৪ সালের ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং ৭ শতাংশ কোটার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরির নিয়োগে ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর হয়।
এদিন ষষ্ঠ দিনের মতো পুরো বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। তবে সবাই ইন্টারনেট পাননি। জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।
২৩ জুলাইও সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। কারফিউ অব্যাহত থাকায় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়। চলমান কারফিউ আরও শিথিল করে সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রাখে। আগের দিন সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে আরও প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৫১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে (১৭-২৩ জুলাই) সারাদেশে গ্রেফতারের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়ায়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার আরও ৩৮টি মামলা হয়। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৪ জুলাই, ২০২৪)।
এদিন সরকারি-বেসরকারি অফিস ২৪ জুলাই (বুধবার) ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একইসাথে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। দাবি মেনে নিলে সংলাপের রাস্তা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো-ইন্টারনেট চালু করতে হবে, কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ নিখোঁজ রয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরও সরকার দাবি মেনে না নেওয়া আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ লাভ করে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। একইদিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। টানা পাঁচ দিন রেল চলাচল বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই তেলবাহী ট্রেন চালু হয়।
এদিন তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাউকে মামলায় জড়ানো হলে তাদের তথ্য যদি কোটা আন্দোলনকারীরা দেন, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখবে সরকার।’
এদিন সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলে দেওয়া যাবে না।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তৎকালীন মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
পরীক্ষা শেষে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান। এর মধ্যে স্কুলটির একটি ভবনে আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যাওয়া বিমানটি। আর এ ঘটনায় ঝরে যায় ২৭টি প্রাণ, যার প্রায় সবাই শিক্ষার্থী।
ফারহান বলে, ‘আগুন ধরা প্লেনটা আমার চোখের সামনেই বিল্ডিংয়ে আঘাত করছে। আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড, যে পরীক্ষার হলে আমার সঙ্গেই ছিল। আমার চোখের সামনেই ও মারা গেছে।’
এ দুর্ঘটনায় ১৭১ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওই ঘটনার কিছু ভিডিওতেও স্কুলটির একটি দোতলা ভবনের নীচতলায় বিধ্বস্ত বিমাটিতে আগুন জ্বলতে ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সেইসঙ্গে চলতে থাকে উদ্ধার তৎপরতা।
বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শী ফারহান বলে, ‘স্কুল গেটের ভেতরে অনেকগুলো গার্ডিয়ান দাঁড়ায়ে ছিল, আর ছোটরা বের হচ্ছিল ছুটির টাইমে। তখন গার্ডিয়ানদেরসহ প্লেনটা নিয়ে গেছে।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল ছুটি হবে হবে—এমন সময় বিমানটা সরাসরি জুনিয়র সেকশনের বিল্ডিংয়ে আঘাত করে।’
আরেক শিক্ষক মাসুদ তারিক বলেন, ‘আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে যখন পিছনে ঘুরে তাকালাম, কেবল আগুন আর ধোঁয়া দেখছিলাম… সেখানে অনেক গার্ডিয়ান ও শিশুরা ছিল।
দুর্ঘটনার পর হতাহতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ সেচ্ছাসেবীরা এগিয়ে আসেন।
এক নারী বিবিসিকে বলেন, তার ছেলে স্কুলের ভেতরেই ছিল। তবে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আর তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয়েছে, শিশুসহ প্রায় ৫০ জনের বেশি মানুষকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ সময় হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি তার ভাইকে জড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমার ভাইপো এখন মর্গে।’
তার ভাইয়ের আট বছর বয়সী ছেলে তানভীর আহমেদ মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় হতাহতের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, যাদের বয়স ১৪ বছরের মধ্যে।
দুর্ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ ঢাকার আরও সাতটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে।
এর আগে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিমানের দুর্ঘটনার পর দেওয়া এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য নয়, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মচারী ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্যও একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এটি জাতির জন্য গভীর শোকের মুহূর্ত।’
দুর্ঘটনার পর এক বিবৃতিতে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।
তারা আরও জানিয়েছে, সোমবার (২১ জুলাই) গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ওই ঘটনায় পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদও নিহত হয়েছেন।
ঘটনাটি তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে দুপুর থেকে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে ও দেওয়াল টপকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর ফাইটার জেট বিধ্বস্তের ঘটনার প্রতিবাদে এবং এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে স্থগিতের নিন্দা জানিয়ে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মচারী-কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা ভেতরে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। স্বরাষ্ট্র ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সামনেও ভাঙচুর চালিয়েছেন তারা।
তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদেরই বলা হয়েছে সচিবালয়ে গিয়ে নিজেদের দাবি জানাতে। সচিবালয়ে তারা গেট ভেঙে প্রবেশ করেননি, এক নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে প্রবেশের পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তারা একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
লালবাগ মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, 'হাসিনা সরকারের আমলে যেভাবে পুলিশ ছাত্রদের পিটিয়েছে, আজকেও সেই একইভাবে আমাদের পেটানো হয়েছে। আমাকে বন্দুকের বাট দিয়ে পিটিয়েছে পুলিশ। পা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।'
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সাইমুন বলেন, ‘সচিবালয়ের গেটের ভেতরে সুকৌশলে ছাত্রদের ঢুকিয়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। সচিবালয়ের কর্মচারীরা পর্যন্ত ছাত্রদের পিটিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’
ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে অমনাবিকভাবে পিটিয়েছে পুলিশ।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সচিবালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একটু পরপর টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২১ জুলাই (সোমবার) ২০২৫ তারিখে মনিজা খাতুন, সিনিয়র সহকারী সচিব ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর জোবিঅ -বন্দর -এর আওতাধীন কুড়িপাড়া, মদনপুর, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ১টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ১টি চুন ফ্যাক্টরির (মোট ৫ ভাট্টি বিশিষ্ট) অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । এ সময় বিভিন্ন ব্যাসের লাইন পাইপ ৫৭ ফুট, ২" ভাল্ব- ২ টি, ২" সার্ভিস টি-২ টি, বার্নার ৩ টি ও বেলচা-১৫ টি অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। চুন কারখানা মালিককে স্পটে না পাওয়ার কারণে জেল/জরিমানা করা সম্ভব হয়নি তবে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর মৌখিক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চুন ফ্যাক্টরির মালিক ও জায়গার মালিক এর বিরুদ্ধে আঞ্চলিক লিগ্যাল বিভাগ-নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক থানায় FIR এর উদ্দেশ্যে অভিযোগ দায়ের করা হবে । অবৈধ চুন কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এক্সক্যাভেটর মেশিনের মাধ্যমে স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণ ও চুন ভিজিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। মদনপুর থেকে আকিজ সিমেন্ট গামী ৮"x১৪০ পিএসআজি বিতরণ লাইন হতে অবৈধ ভাবে স্থাপিত ২" লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ অবৈধ বিতরণ লাইনের সংযোগ উৎসে কিলিং করা হয়েছে।
একই দিনে, জনাব হাসিবুর রহমান, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ-এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ -রুপগঞ্জ, জোবিঅ - আড়াইহাজার -এর আওতাধীন মাহনা, টেকাপাড়া, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ২টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে, ১.৮ কি.মি. এলাকার আনুমানিক ৩৫০ টি বাড়ির ৫৫০ টি আবাসিক চুলার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । এ সময়, ২" ডায়া বিশিষ্ট ৩০০ ফুট (প্রায়) লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বিসমিল্লাহ ফিলিং এন্ড সিএনজি স্টেশন (গ্রাহক সংকেত:৭৩৭-০০০২২, ৮৩৭-০০০৫০১), সাওঘাট, ভুলতা, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এর গ্যাস বিল বকেয়ার কারণে উভয় রানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি বিতরণ লাইন উৎস পয়েন্ট থেকে কিলিং/ ক্যাপিং করা হয়েছে।
এছাড়া, জনাব মিল্টন রায়, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ-এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ - সাভার, জোবিঅ - সাভার -এর রাজফুলবাড়ীয়া, দক্ষিণ রামচন্দ্রপু, তেঁতুলঝোড়া, হেমায়েতপুর, সাভার এলাকার ৪টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে, আলহামদুলিল্লাহ ফ্যাশন হাউজ ও মেসার্স আল আকসা ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামক
২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময়, ৪৮০ ফুট লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এতে মাসিক ১৩,৭৪,২৬০/- টাকার গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত ০২ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর মোট ২,০০,০০০/- টাকা অর্থদন্ড আরোপ করা হয়েছে।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা ও তানভীর আহমেদ এর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
আজ মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলায় দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।
নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের কন্যা এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর আহমেদ (১৪) মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগর ভাতগ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার পুত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র কন্যা নিহত মেহেনাজ আক্তার হুমায়রার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ সকাল ৯টায় সখীপুর হতেয়া কেরানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হতেয়া কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে হুমায়রাকে দাফন করা হয়।
হুমায়রার খালু নাসির সিকদার বাসসকে জানান, গতরাতে ঢাকা থেকে হুমায়রার মরদেহ সখিপুরে নিয়ে আসা হয়। আজ সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। হুমায়রার জানাজায় সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনীসহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমার মেয়ে এবং টাঙ্গাইলের আরো একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। আমার আদরের মেয়েকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এ শোক আমি সইব কীভাবে। পুরো দেশের মানুষ এই শোকের ঘটনায় একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে কেন প্রশিক্ষণ বিমান উড়ছিল, এর কোন জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’-বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এই শোকাহত পিতা।
মির্জাপুর উপজেলার নগর ভাতগ্রাম নয়াপাড়ায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীরের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আজ সকাল ১০টায় মির্জাপুর উপজেলার আন্দিপাড়া মাদ্রাসা মাঠে তানভীরের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আন্দিপাড়া সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা রুবেল মিয়ার ব্যবসার সুবাদে ঢাকায় থাকেন তানভীরের পরিবার। তানভীর ও তাশফিক দুই ভাই। তানভীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ভাই তাশফিক তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে । দুই ভাইই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিদিনের মত মায়ের হাতের খাবার খেয়ে স্কুলে গিয়েছিল দুই ভাই। ছোট ভাই বেলা ১২টায় স্কুল ছুটি হলে বাসায় চলে যায়। কোচিংয়ে পড়ার জন্য স্কুলে থেকে যায় তানভীর। তানভীর ক্লাসের ক্যাপ্টেন হওয়ায় দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তেও শ্রেণিকক্ষের শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছিল।
নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই সজিব বলেন, চাচা-চাচি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি করেছিলেন। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তার লাশ গ্রামে আনা হলে গ্রামে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এমন ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের( ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালকদের জন্য আজ মঙ্গলবার নগরভবন অডিটোরিয়ামে ই-রিক্সা প্রশিক্ষণের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় প্রথম পর্যায়ে ২২-৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি সেন্টারে ই-রিক্সা প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য ১৫০ জন প্রশিক্ষককে নিযুক্ত করা হয়েছে, যারা পর্যায়ক্রমে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রথম পর্যায়ে মোট ৪৫০০ জন রিক্সা চালককে ট্রেনিং প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণার্থী রিক্সা চালকদের সম্মানী ও খাবারের ব্যবস্থা থাকবে।
উদ্বোধনকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, "অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদ ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের জন্য নগরজীবন যানজটের কবলে পড়ে স্থবির ও নাগরিকদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ই-রিক্সা চলাচলের চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে যার ফলে যানজট নিরসণের পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে।" মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী রিক্সা চালকগণ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত হবেন উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন পর্যায়ক্রমে ই-রিক্সা খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, মহা-ব্যবস্থাপক(পরিবহন) মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ প্রমুখগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাস পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন।
রুটিন অনুযায়ী ওই দিন (২৪ জুলাই) অর্থনীতি প্রথম পত্র/প্রকৌশল অঙ্কন ও ওয়ার্কশপ প্র্যাকটিস প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এ কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
রুটিন অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রসায়ন (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র/ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র (মানবিক শাখা)/ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র/গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয় পত্র/উত্পাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল।
এদিকে এই বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে রয়েছে ১০ জন। এ ছাড়া উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে নিহত রয়েছে।
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
মঙ্গলবার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তদশ দিনের বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
এর আগে, আলোচনার শুরুতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার হতাহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। সে সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এই শোক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্যরা।
নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছর এমন সময় আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। এক বছর পর, আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান। কোনো ক্ষতিপূরণই এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, রাষ্ট্রকে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের এই সময়ে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উচিত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকটময় মুহূর্তে সবাই যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহমর্মিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
এর আগে, গতকাল দুপুর সোয়া তিনটায় দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়।
আজকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংক্রান্ত আলোচনা।
ড. আলী রীয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদে দলীয় প্রধান থাকা যাবে না, এ বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে। তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করতে পারবেন।
তিনি সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চাই।
বৈঠকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভা বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
মন্তব্য